//

এ ইসলাম সে ইসলাম নয়

29 মিনিট পড়ুন
  • সম্পাদকীয় কলাম
  • ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

 

 

ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ধারণা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের জন্য নতুন কিছু নয় এবং আপাতদৃষ্টিতে তা গ্রহনযোগ্যও বটে। ব্রিটিশ ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যার গোঁড়াপত্তন হয় মূলত ব্রিটিশ শাসকশ্রেণীর মদদে। ধর্মের ভিত্তিতে উপমহাদেশ ভাগ হয়ে কেবল ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টি। কিন্তু এই বিশাল ভারতীয় ঔপনিবেশিক মহাদেশে আরও দেশ শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভূটান, মালদ্বীপ, মায়ানমার বিভক্ত হয়েছে মূলত জাতীয়তার ভিত্তিতে। আমাদের বাংলাদেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও আমরা মূলত জাতি ধর্মের দিক থেকে বৈচিত্র্যের অধিকারী এবং এখানে কেউ সংখ্যালঘিষ্ঠ হিসেবে বিবেচিত নয়।
ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের পাকিস্তানের থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাধ্যমে আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছি, যা আমাদের জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি করে।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি গ্রহণযোগ্য, যতক্ষণ তা স্বজাত্যবোধ অক্ষূন্ন রাখে এবং ধর্মকে ঢাল বা পূঁজি না করে।
১৯৭১ এর মহান‌ মুক্তিযুদ্ধকে পূঁজি করে আওয়ামী রাজনীতির ধ্বংস আমাদের সকলের গোচরীভূত।
ঠিক একইভাবে মহান ইসলাম ধর্মকে এবং ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিকে দলীয় ও ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করে জামায়াত সমান অপরাধে অপরাধী। এখনও তারা ১৯৭১ এ জামায়াতের ভূমিকা এবং সে বিষয়ে তাদের বর্তমান অবস্থান পরিষ্কার করেনি। তাদের আদর্শিক অবস্থানও ঘোলাটে। যা জাতির সাথে বেঈমানির সামিল।
জামায়াতের প্রাক্তন নায়েবে আমীর এবং রাজশাহীর তানোর উপজেলা হতে ১৯৮৬ সালে নির্বাচিত সাংসদ মুজিবুর রহমান এ বছরের ২০ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে শুধু ইসলামি শরিয়াহ আইন দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনার দাবি করেন।_(সূত্র: দ্যা ইকোনমিক টাইমস)
এর মাধ্যমে তিনি প্রান্তিক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার হরণ করেন অথবা সমমর্যাদার জায়গা হতে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করেন। স্বভাবতই তা সাধারণ জনগণকে সন্ত্রস্ত করে। দেশের জনগোষ্ঠীর ধর্মীয়, জাতিগত বৈচিত্র্যকে অক্ষূন্ন রেখে ভারসাম্য পূর্ণ আইন ব্যবস্থার সমর্থন করলে তাদের আজ ইসলাম বিদ্বেষী, ভারতীয় দালাল এই জাতীয় বিশেষণে চিহ্নিত করা হচ্ছে ঠিক যেভাবে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তথাকথিত রাজাকার ও পাকিস্তানের দালাল বলে চিহ্নিত করতো।
বিগত ষোলো বছর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল শত নির্যাতন গুম খুনের পরও রাজপথ থেকে জনপদ সর্বত্র জনগণের কন্ঠ হিসেবে প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু জামায়াতের যে গুপ্ত রাজনীতি ছিলো তা এখনও জাহির আছে।
বিগত ষোলো বছর আওয়ামী স্বৈরাচারের থেকে গুপ্ত রাজনীতি ক্ষমা সূচক দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হলেও তা বর্তমানে জনগণের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর মাধ্যমে তাদের আদর্শ এবং কার্যসূচি জনগণের থেকে লুকিয়ে তারা জনসমর্থন তো পাবেই না‌ বরং আজ মানুষের আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
যে অপরাধে আজ বাংলাদেশে আওয়ামী রাজনীতির কোনো সুযোগ নেই, সেই একই অপরাধে জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকার নেই।
যতক্ষণ না‌ তারা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ধারণ ও লালন করে, ততক্ষণ এদেশের মানুষ তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে।
নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির প্রায়োগিক ক্ষেত্র আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে। যেসকল রাষ্ট্র রাজতান্ত্রিক রাজ্য হতে সৃষ্ট, সেখানে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা কার্যকরী হয়। আমাদের প্রচলিত এক‌ কক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থায় তা হীতে বিপরীত হবে। উদাহরণ হিসেবে যেভাবে বিগত ১৬ বছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের গুপ্ত রাজনীতি ছিলো ছাত্রলীগ পরিচয়ে, ঠিক একইভাবে বর্তমানে জামায়াত শিবিরের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জামায়াতের মার্কায় বিপুলসংখ্যক আওয়ামী স্বৈরাচারের পূণর্বাসনের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এবং পরবর্তীতে জাতীয় নির্বাচনে তারা নির্বাচিত না‌ হলেও পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে তারাও আমাদের আইনসভা তথা সংসদের নিম্নকক্ষে_(পিআর পদ্ধতিতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ বা আইনসভা হয়) দলীয় সিদ্ধান্তে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবে, যা আওয়ামী স্বৈরাচারের পূণর্বাসনের এক সুনিপুণ চক্রান্ত।
মুখে তারা বলছে ইসলাম কিন্তু ইসলামকে কলুষিত করে তারা জাতীয় বিভক্তি সৃষ্টির ফাঁকে আওয়ামী স্বৈরাচারের পূণর্বাসনের স্বপ্ন দেখছে এই পিআর পদ্ধতির দাবি করে।
আওয়ামী লীগের সাথে হয়তো গুপ্ত সহযোগিতা মূলক‌ দেশদ্রোহী অপরাজনীতি করা যায় কিন্তু তা বাংলাদেশের জনগণের সাথে করা যাবেনা।
একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বৃহ‌ত্তর ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের মুক্তিবাহিনীর কমান্ড জেড ফোর্সের অধিনায়ক বীরউত্তম বাংলাদেশের মহান‌‌ স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে আমরা যে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র অর্জন করেছি তার সামনে সকল গুপ্ত, দ্বিচারি, দেশদ্রোহী, ধর্ম এবং মনুষ্যত্ব অবমাননাকারী আওয়ামী ও জামায়াতের চক্রান্ত বারবার পরাজিত হয়ে এসেছে এবং হবে।
“পিন্ডির গোলামির জিঞ্জির ছিন্ন করেছি দিল্লির দাসত্ব করার জন্যে নয়।”
-মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ

 

 

 

 

মতামত দিন

Your email address will not be published.

সমসাময়িক হতে Blog