- নিজস্ব প্রতিবেদক

শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে জুলাই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হলো “জুলাই জনতার সমাবেশ”। বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আয়োজিত এ সমাবেশে গণহত্যার বিচার, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে ফ্যাসিবাদী আমলাদের উৎখাত, নুরুল হক নুরসহ জুলাই বিপ্লবীদের উপর হামলায় জড়িতদের বিচার এবং জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জুলাই মঞ্চের আহবায়ক আরিফুল ইসলাম তালুকদার। আরও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান, জাগপার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন প্রধান, ভাসানী জনশক্তি পার্টির মহাসচিব ড. আবু ইউসুফ সেলিম, এনডিপি সভাপতি কারী আবু তাহের, পিপলস্ পাওয়ার পার্টির সভাপতি ফখরুল ইসলাম, শাহবাগ থানা জামায়াত ইসলামী আমির শাহ মো. মাহফুজুল হক, শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহীনা বেগম, শহীদ আবুল হোসেনের মা সালমা বেগম, শহীদ বায়জিদ বোস্তামীর স্ত্রী রিনা বেগম, এসো দেশ গড়ির সভাপতি ডিউক হুদা ও বৈষম্য বিরোধী কওমী ছাত্র আন্দোলনের মোস্তফা হোসাইন প্রমুখ।
বক্তারা অভিযোগ করেন, আগে লুটপাট করতো আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানরা, আর এখন লুট করছে প্রশাসন ও আমলারা। দেশের মানুষ আজ ভাতা থেকে বঞ্চিত, গণমাধ্যম কথা বলতে পারছে না, বাকস্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন পর্যন্ত উপদেষ্টাদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ করেনি, আহত বিপ্লবীদের সঠিকভাবে সহযোগিতা করছে না। তারা সতর্ক করে বলেন, এবার যদি বাংলাদেশ পরিবর্তিত না হয়, তাহলে আর কখনো এই রাষ্ট্র সঠিক পথে ফিরবে না।
জুলাই মঞ্চের মুখ্য সংগঠক অর্নব হোসেন সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, “নুরুল হক নূরকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করা হয়েছে। অথচ সেনাপ্রধান ওয়াকারুজ্জামান দুঃখ প্রকাশ না করে বলেছেন, ‘যারা বিশৃঙ্খলা করতে গেছে আমরা তাদের প্রতিহত করেছি’। এ বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে হবে, অন্যথায় সেনাপ্রধানের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করা হবে।” তিনি আরও দাবি করেন, মীরসরাইয়ে আদানিকে দেওয়া ৯০০ একর জমি বাতিল করতে হবে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশার সামান্যই পূরণ হয়েছে। বিপ্লবীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে তারা নিজেরাও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। নুরুল হক নুরের ওপর পুলিশ, সেনা ও জাতীয় পার্টির হামলার বিচার না হওয়াটা একটি অশনিসংকেত। এ বর্বরোচিত হামলার বিচার না হলে অন্য শরিকরাও ভবিষ্যতে একই পরিণতির শিকার হবে।”
শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহীনা বেগম বলেন, “জুলাই শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও বিচারে সরকার গাফিলতি করছে। বিচারের নামে তালবাহানা চলছে। এ ব্যর্থতার দায় নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদত্যাগ করা উচিত।”
জুলাই মঞ্চের আহবায়ক আরিফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, “বিপ্লবের পর যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়েছে, তা আসলে বিপ্লবের ওপর এক ‘বিগেস্ট স্ক্যাম’। যারা ১৭ বছরের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখেনি, তাদের উপদেষ্টা বানানো হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রযন্ত্রে এখনো ফ্যাসিবাদের দখল বহাল রয়েছে। এই দখলের কারণেই বিপ্লব বিতর্কিত হয়েছে।”
জুলাই মঞ্চের মুখপাত্র সাকিব হোসাইন জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের শত্রু আখ্যা দিয়ে বলেন, “তারা জনগণের ভোটাধিকার ও নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে, বিদেশি স্বার্থ বাস্তবায়ন করেছে। তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ না করা সরকারের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ।”
এ সময় উপস্থিত নেতারা বলেন, জুলাই বিপ্লবে শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেয়া হবে না। সকল ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিপ্লবের লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে আসতে হবে।