‘ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিল আমার দুই মেয়ে-জামাই ও তাদের দুই সন্তান। বড় মেয়ে সিলেট থাকত। বড় জামাই সিলেট থেকে ট্রান্সফার হয়ে বরিশালে আসবে। তার জন্য সবাই মিলে ভাড়া বাসা দেখতে যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে প্রাইভেটকারটি যখন ঝালকাঠি গাবখান সেতুর টোলপ্লাজায় টোল দিচ্ছিল তখন একটি ট্রাক আমার মেয়ে-জামাই-নাতি-নাতনিদের চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে। আমার নাতিটা দুপুর ১২টার দিকেও আমার কোলে ছিল। আমি আদর করে চুমু দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দিলাম।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে সদর হাসপাতালে মরদেহের পাশে বসে কথাগুলো বলছিলেন নিহত দুই মেয়ের বাবা বারেক মৃধা।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের চাপায় প্রাইভেটকার ও অটোরিকশার ১৪ যাত্রী নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় বৃদ্ধ বারেক মৃধার পরিবারের ৬ জন নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন, রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের সাউথপুর এলাকার নাহিদা আক্তার সনিয়া (৩০), তার স্বামী মো. হাসিবুর রহমান (৩৫), তাদের ছেলে তাহমিদ (১), মেয়ে তাকিয়া (৪) এবং ছোট বোন রিপা আক্তার (২২) ও তার স্বামী আল-ইমরান (২৩)। নিহত হাসিবুর রহমান সিলেটে কুরিয়া সার্ভিসে ব্রাঞ্জ ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন। পরিবার সহ ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। নিহত ইমরান ঢাকা কুমরিডলা বিমান বাহিনীতে চাকরি করতেন। তিনিও ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। বউ নিয়ে হানিমুনে কুয়াকাটা ঘুরতে যাচ্ছিলেন।
বাবা বারেক মৃধা আরও বলেন, মা-বাবা সবাই যাচ্ছিল তাই নাতি-নাতনিদেরও যেতে দিয়েছিলাম। যখন গাড়িতে ওঠে তখন একবার মনে হলো যে ওদের যেতে দেব না। তারপরও কি মনে করে যেতে দিলাম।
নিহত দুই বোনের ভাই পারভেজ বলেন, সবাই বাড়ি থেকে প্রাইভেট কার নিয়ে বের হয়েছিল বরিশালে বাসা ভাড়া করার জন্য। এরপর খবর পাই গাবখান সেতুর এখানে সড়ক দুর্ঘটনায় সবাই মারা গেছে।
বোন মনি আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ওরা একজন বরিশালে আরেক জন কুয়াকাটা ঘুরতে যাবে। কিন্তু আর যাওয়া হলো না। আরেক বোন তরিকা আক্তার বলেন, দুপুরে সবাই এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে প্রাইভেটকারে বরিশালের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনি আহাজারি করে আরও বলেন, ওদের ছোট ছোট সন্তানদেরও আদর করে দিলাম। এটাই যদি শেষ আদর হবে বুঝতাম তাহলে আরও বেশি করে আদর দিতাম। ছোট বোন রিপার এক মাস আগে বিয়ে হয়েছে। ওদের হাতের মেহেদি এখন পর্যন্ত মুছেনি। নববিবাহিত দম্পতির ইচ্ছা ছিল বরিশাল থেকে কুয়াকাটা গিয়ে হানিমুন করবে। কিন্তু সেই ইচ্ছা আর পূরণ হলো না। এখন হানিমুনের পরিবর্তে অন্তিম শয়নে শায়িত হলো।